পৃথিবীর ঘূর্ণন যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়?

আমরা পৃথিবীতে বাস করি। এই পৃথিবীকে নিয়ে আমাদের প্রশ্নের কোনো শেষ নেই। আমাদের বাসভূমি পৃথিবী প্রতি ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড সময়ে নিজ কক্ষে ১ বার প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবীর জন্মলগ্নে ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে থিয়া নামক একটি মহাজাগতিক বস্তুর সাথে সংঘর্ষ হয় পৃথিবীর। সেই থেকে পৃথিবী নিজ অক্ষে ঘুরছে (নিউটনের গতির ১ম সূত্র অনুসারে)। পৃথিবীর এই ঘূর্ণন গতিকে আহ্নিক গতি বলে। এই আহ্নিক গতির ফলেই পৃথিবীতে দিন-রাত্রি আবর্তিত হয়। কিন্তু কি হবে যদি পৃথিবী থেমে যায় ? কি হবে যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ? এই সকল প্রশ্নের উত্তর থাকছে "জ্ঞানী বাবা"র আজকের লেখায়...চলুন শুরু করা যাক।
পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে পৃথিবীবাসী আরও অনেকগুলো মহাবিপর্যয়ের সম্মুখীন হবে।

পৃথিবীর সবকিছু পূর্ব দিকে ছিটকে যাবে

পৃথিবী তার নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ১৬৭৫ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা বেগে আবর্তন করছে। যেহেতু আমরা মানুষেরা সহ পৃথিবীর সকল উপাদান পৃথিবীর সাথে একই বেগে গতিশীল, তাই আমরা পৃথিবীর এই অকল্পনীয় ঘূর্ণন বেগ উপলব্ধি পারি না।  কিন্তু কোনো কারণে এই ঘূর্ণন থেমে গেলে এর গুরুত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারব। যেহেতু  পৃথিবী তার নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ১৬৭৫ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা বেগে আবর্তন করে, ফলে পৃথিবীর মধ্যকার সকল উপাদানও একই বেগে গতিশীল, হঠাৎ পৃথিবী থেমে গেলেও গতি জড়তার কারণে পৃথিবীর সকল বস্তু একই বেগে পূর্ব দিকে যেতে চাইবে ফলে আপনি- আমি,রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা সবকিছু অকল্পনীয় বেগে ছিটকে যাবে পূর্ব দিকে। পৃথিবী থেমে যাওয়ার ১ম কয়েক সেকেন্ডেই লন্ডভন্ড হয়ে যাবে আমাদের বাসভূমি পৃথিবী। মারা যাবে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ।
কি হবে যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় ?
পৃথিবী তার নিজ অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ১৬৭৫ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা বেগে আবর্তন করছে।

ভূপৃষ্ঠে প্রচণ্ড ঝড়ের আবির্ভাব ঘটবে

পৃথিবীর ঘূর্ণনের সমান বেগে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলও আবর্তনশীল।  হঠাৎ পৃথিবী থেমে গেলেও বায়ুমণ্ডল একই বেগে গতিশীল থাকবে ফলে পৃথিবীতে প্রচণ্ড ঝড়ের সৃষ্টি হবে। যে ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ হবে পৃথিবীর বিষুবীয় অঞ্চলে যা প্রায় ১৬৭৫ কি.মি. প্রতি ঘণ্টা। আমাদের পৃথিবীতে এখন পর্যন্ত যত ঝড় হয়েছে তার চেয়ে এই ঝড়ের গতি হবে কয়েক গুনেরও বেশি। এই ঝড়ের ফলে এতক্ষণ যারা বিমান বা অন্য কোনো আকাশযানে নিরাপদ ছিল তারাও  নিঃশেষ হয়ে পড়বে।  

পুরো পৃথিবীতে ভয়ানক সুনামি আঘাত হানবে

পৃথিবীর সাথে সমুদ্রের জলও ঘূর্ণায়মান। কিন্তু পৃথিবী থেমে গেলেও সমুদ্রের জল গতি জড়তার দরুন সামনে এগিয়ে যেতে চাইবে। ফলে সৃষ্টি হবে পর্বত প্রমাণ ঢেউ। সেই সমস্ত ঢেউয়ের আঘাতে মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর অনেক দেশ পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে সকল লোকালয়।

পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাবে

আমরা জানি পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকার নয়; উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে কিছুটা চ্যাপ্টা। পৃথিবীর ঘূর্ণনের ফলে কেন্দ্রবিমুখী বলের সৃষ্টি হয়, এই বল সবচেয়ে বেশি হয় পৃথিবীর বিষুবীয় অঞ্চলে ,ফলে পৃথিবীর বেশির ভাগ পানি মহাসাগর রূপে এ স্থানগুলোতে অবস্থান করে। পৃথিবী থেমে গেলে বিষুবীয় অঞ্চলে কেন্দ্রবিমুখী বলের পরিমাণ হবে ০, ফল স্বরূপ পানির ধর্ম অনুযায়ী সমুদ্রের সব জল পৃথিবীর  দুই মেরুতে প্রচণ্ড বেগে সুনামির নজর আঘাত হানবে। ফলে এতক্ষণ দুই মেরুতে যারা  বেঁচে ছিল (যদি থাকে)  তারাও নি:শেষ হয়ে যাবে।

পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭১ ভাগ জল আর ২৯ ভাগ স্থল। পৃথিবী থেমে গেলে বেশিরভাগ জল দু মেরুতে ধাবিত হওয়ার ফলে নতুন নতুন গিরিখাতের সৃষ্টি হবে, গঠিত হবে নতুন মহাদেশ। বদলে যাবে পুরো পৃথিবীর মানচিত্র।
পৃথিবী পুরোপুরি গোলাকার নয়; উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে কিছুটা চ্যাপ্টা
পৃথিবীপৃষ্ঠের ৭১ ভাগ জল আর ২৯ ভাগ স্থল। পৃথিবী থেমে গেলে বেশিরভাগ জল দু মেরুতে ধাবিত হওয়ার ফলে নতুন নতুন গিরিখাতের সৃষ্টি হবে, গঠিত হবে নতুন মহাদেশ।

দিন-রাতের ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়ে যাবে 

পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারপাশে আবর্তন করে বিধায় পৃথিবীতে পর্যায়ক্রমে দিন-রাতের সৃষ্টি হয়। পৃথিবী ঘোড়া বন্ধ করে দিলে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় দিন-রাত আবর্তিত হবেনা। পৃথিবীর যে অংশ সূর্যের দিয়ে মুখ করে থাকবে সেখানে হবে ৬ মাস দিন আর বিপরীত দিকে মুখ করে থাকা অংশে হবে ৬ মাস রাত। যে অংশে ৬ মাস দিন হবে সেখানকার গড় তাপমাত্রা আশঙ্কা জনক ভাবে বেড়ে যাবে ফলে সেখানে কোনো প্রাণীর বসবাস সম্ভব হবেনা।  অপরদিকে যে অংশে ৬ মাস রাত সে অংশের গড়  তাপমাত্রা হিমাঙ্কের  অনেক নিচে নেমে যাবে। ফলে সেখানেও কোনো জীব টিকে থাকতে পারবে না। 

পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড নষ্ট হয়ে যাবে

আমরা সকলেই জানি পৃথিবীর কেন্দ্রে একটি তরল ধাতব কর বা মজ্জা রয়েছে। পৃথিবীর সাথে সাথে পৃথিবীর  কোরও সর্বদা ঘূর্ণনশীল। ফলে ডায়নামো ইফেক্টের দরুন সৃষ্টি হয় একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র। এই চৌম্বক ক্ষেত্র পৃথিবীর চারপাশে বিরাজ করে। এই চৌম্বক ক্ষেত্রই পৃথিবীর  ওজন স্তরকে আটকে  রাখে। ফলে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্নি সোহো কোনো ক্ষতিকর রশ্নি পৃথিবীতে ঢুকতে পারেনা। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র নষ্ট হয়ে গেলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে সহজেই যাবতীয় ক্ষতিকর রশ্নি প্রবেশ করতে পারবে ফলে ভূপৃষ্ঠে কোনো জীবই টিকে থাকতে পারবে না।

শেষ কথা

পরিশেষে বলতে হয়, পৃথিবী যদি হঠাৎ থেমে যায় তা কারো জন্যে হিতকর হবে না. তবে আশার বাণী এই যে আগামী কয়েক বিলিয়ন বছরেও পৃথিবী স্বাভাবিকভাবে কখনো পরিপূর্ণভাবে হঠাৎ থেমে যাবেনা। আমরা এতক্ষণ যা পর্যালোচনা করলাম তা ছিল হাইপোথিটিক্যাল (কাল্পনিক). তাই ব্যাপারটাকে বেশি  সিরিয়াসলি নেবার প্রয়োজন নেই

"জ্ঞানী বাবা"র আজকের প্রশ্ন-
কোন অঞ্চলে পৃথিবীর ঘূর্ণন বেগ সবচেয়ে বেশি?

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

জ্ঞানী বাবা'র পোস্টটি কি ভালো লেগেছে? ভালো লেগে থাকলে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা আমাদের ভিউয়ারদের প্রতিটি কমেন্ট রিভিও করে থাকি!

comment url